যে ধরনের চাকরিতে মানুষ সবচেয়ে অসুখী
বিশ্বে কত ধরনের পেশাই না আছে! ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে চাকরি-বাকরি। এই চাকরির বাজারে নেমে অনেকে তুষ্ট। তবে অনেকেই আবার আছেন, যাঁরা নিজের চাকরি নিয়ে মোটেও খুশি নন। কোন ধরনের চাকরিতে মানুষ সবচেয়ে অসুখী, তা এক গবেষণায় তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
গবেষণাটি শুরু করা হয় বহু আগে, ১৯৩৮ সালে। তখন থেকে ৮৫ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ৭০০ জনের বেশি চাকরিজীবীর কাছ থেকে তাঁদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণার অংশ হিসেবে দুই বছর পরপর তাঁদের জীবন সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চেয়েছেন গবেষকেরা।
খুঁটিনাটি সব তথ্য নিয়ে গবেষণার পর দেখা গেছে, যেসব চাকরিতে মানুষের মধ্যে সংযোগ কম হয় এবং সহকর্মীদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ কম পাওয়া যায়, সেসব চাকরি করে মানুষ সবচেয়ে অসুখী। আর অর্থ থাকলেই স্বাস্থ্যকর, দীর্ঘ ও সুখী জীবনের স্বাদ পাওয়া যায় না। এগুলোর সঙ্গে পেশাগত সফলতা, ব্যায়াম কিংবা স্বাস্থ্যকর খাবারেরও সম্পর্ক নেই। বরং সুখী জীবনযাপনের সূত্র হলো ইতিবাচক সম্পর্ক, যা মানুষকে হাসিখুশি রাখে।
এ নিয়ে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক ও হার্ভার্ড স্টাডি অব অ্যাডাল্ট ডেভেলপমেন্টের পরিচালক রবার্ট ওয়ালডিংগার সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে বলেন, ‘এটি (ইতিবাচক সম্পর্ক) একটি জরুরি সামাজিক চাহিদা, যা জীবনের সব ক্ষেত্রে থাকা দরকার। আর যদি মানুষের সঙ্গে বেশি যুক্ত থাকেন, তাহলে আপনি চাকরি নিয়ে আরও বেশি তুষ্ট থাকবেন এবং ভালো কাজ করবেন।’
গবেষণায় কথা বলা হয়েছে কর্মস্থলে একাকিত্ব নিয়েও। কোন কোন ধরনের পেশায় চাকরিজীবীরা একাকিত্বে ভোগেন, তার একটি তালিকাও করা হয়েছে। সরবরাহ সেবা (ডেলিভারি সার্ভিস) বা এ ধরনের যেসব কাজ প্রযুক্তির সহায়তায় পরিচালনা করা হয়, সেখানে কর্মীরা সবচেয়ে বেশি অসুখী। কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে অসুখী তকমা দেওয়া হয়েছে অনলাইনে যাঁরা খুচরা পণ্য বিক্রির চাকরি করেন, তাঁদেরও। এসব মানুষ একই সময়ে একই কর্মক্ষেত্রে থেকেও অনেক সময় একে অপরের নাম জানারও সুযোগ পান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়।
রবার্ট ওয়ালডিংগার বলেন, যেসব চাকরিজীবীকে একা থাকতে হয় কিংবা রাতে কাজ করতে হয়, তাঁরা সবচেয়ে বেশি একাকিত্বে ভোগেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ট্রাকচালক ও রাত্রিকালীন নিরাপত্তাকর্মীদের কথা।
গবেষণায় বলা হচ্ছে, চাকরিতে লোকজনের মধ্যে থেকেও যদি একে অপরের সঙ্গে ইতিবাচক ও অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা না যায়, তাহলেও একজন একাকিত্বে ভুগতে পারেন। এ কারণে একাকিত্ব কমাতে ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাকরির আরও সামাজিকীকরণ প্রয়োজন।
কোন মন্তব্য নেই