অর্থনৈতিক সংকটেও কেন ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে

 

করোনা মহামারি কেবল মৃত্যু আর বিশৃঙ্খলাই বাড়ায়নি, এর কারণে বিশ্বজুড়ে বৈষম্যও বেড়েছে ব্যাপক। অক্সফামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির মধ্যে প্রতি ৩০ ঘণ্টায় নতুন করে একজন শতকোটিপতির (বিলিয়নিয়ার) জন্ম হয়েছে। বিপরীতে ১০ লাখ মানুষ হয়েছে দরিদ্র। খবর আল–জাজিরার।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্সের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, করোনা মহামারি চলাকালে বিশ্বের ১৩১ জন শতকোটিপতির সম্পদ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০২০ সালের শুরু থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বার্নার্ড আর্নল্ডের সম্পদ বেড়েছে ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।

দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি। আর তৃতীয় শীর্ষ ধনী ভারতের গৌতম আদানির সম্পদ দশ গুণের বেশি বেড়েছে। ২০২০ সালের শুরুতে তাঁর সম্পদ ছিল প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে শুধু ২০২০ সালেই প্রায় ৯ কোটি ৭০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়েছে। তাদের দৈনিক আয় ২ ডলারেরও কম। এ বছর শেষে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের হার ৯ ছাড়াবে বলে জানানো হয়েছে।

বিশ্বের প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২০ সাল থেকে ১১ লাখ কোটি ডলারের (১১ ট্রিলিয়ন) বেশি বিনিয়োগ করেছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ঋণ নেওয়া কমলেও বড় ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে নতুন নতুন বিনিয়োগ করছেন।

পাশাপাশি মহামারি ও মন্দার মধ্যে অর্থনীতি চাঙা করতে অনেক দেশ অর্থের সরবরাহ বাড়ানো, কর সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা দেয়। অক্সফামের এক জরিপে দেখা গেছে, কারোনাকালে বিশ্বের ১৬১টি দেশের মধ্যে ১৪৩টি দেশ ধনীদের জন্য কর সুবিধা বাড়িয়েছিল। এ ছাড়া আরও ১১টি দেশ করের হার কমিয়েছিল।

এসব কারণে ধনীদের সম্পদ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও। শেয়ারবাজারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসের তথ্যানুসারে, করোনার মধ্যে এক বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বেড়েছে ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যার মাত্র ৪০ শতাংশ ২৫টি কোম্পানির হাতে।

১৯৮০-এর দশক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের হিস্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাতে অর্থনীতিতে আয় ও সম্পদের বৈষম্য বাড়ে। মহামারি ও মন্দার মধ্যে এই ব্যবধান আরও বেড়ে যায়।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইয়ানিস ডাফারমোস বলেন, যখনই অর্থনৈতিক সংকট আসে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো উদারনীতি গ্রহণ করে। আর বড় কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ করে। এতে তাদের সম্পদ বেড়ে যায়। এর বিপরীতে দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের মানুষের দর–কষাকষির ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বৈষম্য বাড়ে।

ডাফারমোস আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়েও বড় কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমেনি; বরং মজুরি বাড়ানোর পরিবর্তে তারা শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার জন্য মুনাফা ধরে রাখছে। এমনকি কেউ কেউ কর্মীদের চাকরি থেকেও ছাঁটাই করছে।

অক্সফাম আমেরিকার ইকোনমিকস জাস্টিস বিভাগের পরিচালক নাবিল আহমেদ বলেন, ধনী-দরিদ্রের এই বৈষম্য অনিবার্য নয়। দেশে দেশে নীতিনির্ধারকদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই তা হয়।



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.