কর্মী সন্তুষ্টিতে বিশ্বসেরা স্যামসাং

 

করোনা মহামারির প্রভাবে পৃথিবীর অনেক কিছুই বদলে গেছে। সম্ভবত সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে মানুষের মানসিকতায়। ২০২১ সালে যখন বিশ্বের অধিকাংশ কোম্পানি ঘর থেকে কাজের সুযোগ রদ করে, তখন দেখা গেল এক অদ্ভুত ঘটনা—কর্মীরা কার্যালয়ে গিয়ে কাজ করবেন না বলে দলে দলে পদত্যাগ করতে শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম ব্যুরোর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২ লাখ মানুষ কাজ ছেড়েছেন। 

এত দিন উচ্চ বেতনের বিনিময়ে পশ্চিমারা দিনরাত এক করে কাজ করতে অবহেলা করতেন না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে সেই মনোভাবে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। মহামারি তাতে আরও গতি দিয়েছে। বেতন ও পেশাদারত্ব উন্নয়নের পাশাপাশি কাজের উদ্দেশ্যমুখিনতায় জোর দিচ্ছে মানুষ। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গার্টনার বিশ্বের ৩ হাজার ৫০০ কর্মী নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখেছে, ৬৫ শতাংশ কর্মী কাজের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। ৫৬ শতাংশ সমাজের প্রতি আরও অবদান রাখতে চান। 

যেসব কোম্পানি এই বিষয়গুলো আমলে নিতে পেরেছে, তারাই নিয়োগদাতা হিসেবে শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে। যারা মূলত সব খাতে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, তারাই কর্মীদের চোখে ভালো কোম্পানি। সম্প্রতি কর্মী–সন্তুষ্টির দিক থেকে বিশ্বের সেরা কোম্পানির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। তালিকায় বিশ্বের ৮০০ কোম্পানির নাম উঠে এসেছে। যার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার মালিকানাধীন কোম্পানি স্যামসাং। এ তালিকার শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে বাকি ৯টিই যুক্তরাষ্ট্রের। শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিরই আধিপত্য বেশি। ৩ হাজার ৫০০ কর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে কর্মী সন্তুষ্টির দিক থেকে বিশ্বসেরা ৮০০ কোম্পানির এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে গত অক্টোবরে। 

বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করতে হলে কেবল ভালো পারফরমার হতে হবে, বিষয়টি এখন আর নিছক সে রকম নয়। অর্থপূর্ণ কর্মপরিবেশ ও মানবজীবনে প্রভাব—এসব এখন বিবেচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। কোম্পানির মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে এসবও বড় নিয়ামকশক্তি হয়ে উঠেছে।

ফোর্বস-এর প্রতিবেদনে মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে, যদিও তারা তালিকার শীর্ষ দশে নেই। তাদের উদ্ভাবিত কোভিড টিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম অনুমোদন লাভ করে। টিকার অনুমোদনবিষয়ক ঘোষণার সময় তাদের কর্মীদের অনুভূতি কেমন ছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, টেলিভিশনে ঘোষণা দেওয়ার সময় ফাইজারের সব কর্মী পর্দার সঙ্গে রীতিমতো সেঁটে ছিলেন। সিএনএনের পর্দায় যখন দেখানো হলো, ফাইজারের টিকাভর্তি ট্রাক বিতরণের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে, তখন সবার চোখেই চিল আনন্দাশ্রু।

ফাইজারের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা পায়েল সাহনি ফোর্বসকে বলেন, মহামারির মতো মানবিক বিপর্যয়ের সময় কোম্পানি হিসেবে ফাইজার যে কেবল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখেনি; বরং সমাজে প্রভাব ফেলার লক্ষ্যে অবস্থান নিয়েছিল, তাতে কোম্পানি হিসেবে ফাইজার আরও শক্তিশালী হয়েছে। সাহনি আরও বলেন, ‘টিকা উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের লক্ষ্য পূরণে সফল হয়েছি।’ 

এর পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ফাইজারের আরেকটি বড় উদ্ভাবন বাজারে আসে। সেবার তারা কোভিড চিকিৎসায় প্রথম মুখে খাওয়ার বড়ি উদ্ভাবন করে, নাম পাক্সলোভিড। সেই উদ্ভাবনের পর কর্মীদের বৃহস্পতি যেন তুঙ্গে উঠে যায়। অর্থাৎ মানুষের জীবন রক্ষার কাজে যুক্ত থাকতে পেরে ফাইজারের কর্মীরা জীবন সার্থক মনে করেছেন। 

এই বাস্তবতায় ফোর্বস মনে করছে, কাজের জগতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। মানুষের মনে যে পরিবর্তন এসেছে, বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলোকে তা আমলে নিতে হবে।

সূত্র: প্রথম আলো


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.