নিজেই বানাই নিজের ওয়েবসাইট


 

কোন ধরনের ওয়েবসাইট, ডিজাইন কীভাবে

ই-কমার্স, ই-লার্নিং, নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ছবি বিনিময়ের মাধ্যমের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে। ধরন অনুযায়ী ওয়েবসাইটের নকশাও (ডিজাইন) আলাদা হয়। যেমন ই-কমার্স মানে অনলাইনের মাধ্যমে বেচাকেনার ওয়েবসাইটে জনপ্রিয় পণ্যগুলো সবার আগে দেখানো হয়। কিছু ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে পণ্য কিনতে হয়। আবার নিউজ পোর্টালে সর্বশেষ সংবাদ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধন না করেও পাঠক সহজেই সংবাদ পড়তে পারেন। আবার প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানানো হয়—যেমন প্রতিষ্ঠানটি কিসের, তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী, কী কী পণ্য বা সেবা দিয়ে থাকে, কারা পরিচালনা করছে, কীভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় প্রভৃতি।

ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে মূলত ব্যক্তির পরিচয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লিংক, তার কাজের পরিচিতি, ছবির অ্যালবাম, ভিডিও, বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার তথ্য, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা, জীবনবৃত্তান্তসহ যোগাযোগের ঠিকানা বা ফোন নম্বর দেওয়া যাকে।

কী কী কারিগরি বিষয় জানতে হবে

নিজে িনজে ওয়েবসাইট তৈরির জন্য খুব বেশি কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। তবে ই-কমার্স, ই-লার্নিং, নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাইট তৈরির জন্য অবশ্যই ভালো কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

ওয়েবসাইট বানানোর জন্য প্রথম যে বিষয়টি জানা প্রয়োজন, তা হলো হাইপার টেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ বা এইচটিএমএল। আমরা ওয়েবসাইট দেখার জন্য যে অ্যাপ বা সফটওয়্যার ব্যবহার করি, তাকে বলে ওয়েব ব্রাউজার। জনপ্রিয় ব্রাউজারগুলো হলো গুগল ক্রোম, এজ, ফায়ারফক্স, সাফারি।

এইচটিএমএল ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন সিএসএস (ক্যাসকেডিং স্টাইল শিট)। সিএসএসের মাধ্যমে এইচটিএমএলে নকশা করা যায়। অর্থাৎ লেখার রং, আকার, ফন্ট, ছবির আকার কেমন হবে, বৃত্তাকারে দেখাবে কি না, একইভাবে বিভিন্ন ব্লকের পেছনের রং, লে-আউট কেমন হবে; বিভিন্ন উপাদানের অ্যানিমেশন; মোবাইলে কীভাবে দেখাবে—এই সবকিছু সিএসএসের মাধ্যমে নকশা করা যায়। এটিও ডব্লিউথ্রিস্কুলস ডটকম থেকে সহজে শেখা যাবে। ফলে শুধু এইচটিএমএল ও সিএসএস দিয়েই একটি ওয়েবসাইট বানানো সম্ভব।

যদি মনে হয় ওয়েবসাইটটি একটু ডাইনামিক করতে হবে, তবে  প্রোগ্রামিং ভাষার (ল্যাঙ্গুয়েজ) সাহায্য নিতে হয়। আর ব্রাউজারের জন্য বহুল ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হলো জাভাস্ক্রিপ্ট। এটি দিয়ে জটিল কাজ সহজে করা সম্ভব।

আমরা যে তিনটি প্রোগ্রামিং ভাষা নিয়ে কথা বলেছি, সেগুলো হলো ব্যবহারকারির ওয়েবসাইট ব্যবহারের জন্য (ক্লায়েন্ট সাইড ল্যাঙ্গুয়েজ)। সার্ভারে কাজ করার জন্যও আলাদা ভাষা আছে। সার্ভার সাইড ল্যাঙ্গুয়েজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পিএইচপি। এ ছাড়া আছে পাইথন, জাভা, সি#, নোড.জেএস। বিশ্বের যত বড় বড় ই-কমার্স, ই-লার্নিং, নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আছে, সবকিছুর নেপথ্যে (ব্যাকএন্ড) ওই সব সার্ভার সাইড ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়েছে।

ওয়েবসাইটে তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্যও আলাদা একটি সফটওয়্যার প্রয়োজন আর তা হলো ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা ডিবিএমএস। কিছু ডিবিএমএস আছে, যেগুলোতে টেবিল আকারে তথ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়, তাদের আরডিএস বলে। জনপ্রিয় আরডিএসগুলো হলো এসকিউএল সার্ভার, মাইএসকিউএল। আবার কিছু ডিবিএমএস আছে, যেগুলো কি-ভ্যালু আকারে ম্যানেজ করা হয়, এদের নোসিকুয়েল বলা হয়। যেমন মনগোডিবি, ফায়ারবেজ।

ডোমেইন ও হোস্টিং কীভাবে কিনতে হবে

সহজভাবে বললে ফেসবুক ডটকম বা গুগল ডটকম—এই নামগুলো হলো ওয়েবসাইটের ডোমেইন। আর ওয়েবসাইট যেখানে রাখা হয়, তাকে হোস্টিং বলে। প্রথমে ডোমেইন নাম কিনতে হয়। ডোমেইন নাম অনেকটা পাসপোর্ট নম্বরের মতো, যা অন্য কারও সঙ্গে মিলবে না। তাই আপনার পছন্দের ডোমেইন নাম অন্য কেউ ব্যবহার করছে কি না, তা আগে খুঁজে দেখতে হবে। ডোমেইন কেনার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে। যেমন গোড্যািডডটকম (godaddy.com), নেমচিপ (namecheap.com), ব্লুহোস্ট (bluehost.com) বিডয়া ডট বিটিসিএল ডটকম ডটবিডি (bdia.btcl.com.bd)। আবার ওয়েবসাইট হোস্টিংও করতে পারবেন। তবে বিটিসিএল বাদে অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে ডোমেইন হোস্টিংয়ের জন্য দ্বৈত মুদ্রা (ডুয়েল কারেন্সি) সুবিধার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হবে। চাইলে দেশি প্রতিষ্ঠানা থেকেও হোস্টিং সেবা কেনা যাবে।

হোস্টিং যেভাবে

ওয়েবসাইট রাখার জায়গাকে যেহেতু হোস্টিং বলে, তাই জায়গার পরিমাণ কত হবে, তার ওপর ভিত্তি করে হোস্টিং নির্ভর করে। আপনার ওয়েবসাইটে যদি অনেক বেশি ছবি বা ভিডিও থাকে, তাহলে অবশ্যই সার্ভারে জায়গা বেশি লাগবে। আবার যদি অনেক বেশি ব্যবহারকারীর তথ্য রাখতে হয়, তাহলে তথ্যভান্ডারের ধারণক্ষমতা বেশি লাগবে। আপনার ওয়েবসাইট যদি অনেক বেশি মানুষ ব্যবহার করে, তবে একাধিক সার্ভার প্রয়োজন হবে। সার্ভার ব্যবস্থাপনার জন্য লোড ব্যালেন্সারেরও প্রয়োজন হতে পারে। মনে রাখতে হবে, যত বেশি মানুষ আপনার সাইট দেখবে (ট্রাফিক), আপনার ওয়েবসাইটের ব্যান্ডউইডথ তত বেশি খরচ হবে।

আর্থিক লেনদেন–সুবিধা যুক্ত করার উপায়

ই-কমার্সসহ অনেক ওয়েবসাইটে অনলাইন লেনদেন–সুবিধা যুক্ত করা হয়। বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে। পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহারের জন্য আয়কর সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়। ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা নীতি কী, তা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হয়। আর্থিক লেনদেন–সুবিধা যুক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেটআপ ফি, লেনদেনের ওপর কমিশন বা বার্ষিক চার্জ নিয়ে থাকে।



___ বিনা মূল্যে ও সহজে এইচটিএমএল শেখার ওয়েবসাইট হলো ডব্লিউথ্রিস্কুলস ডটকম (w3schools.com)। এখানে শেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজও করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.