‘রহস্যময় ফ্রি হিট’ নিয়ে চলছে দ্য সিক্সটি
ক্রিকেট খেলাটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যেন কোনো শেষ নেই! পৃথিবীর আর কোনো খেলার এত সংস্করণ আছে বলেও মনে হয় না।
ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে উদ্ভাবনের পর একটা সময় গিয়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে পরিচিত সংস্করণ হয়ে ওঠে টেস্ট ক্রিকেট। তবে শুরুর দিকে সেই টেস্ট ক্রিকেটও চলত অনির্দিষ্ট সময় ধরে। একপর্যায়ে টেস্টের দৈর্ঘ্য নেমে এল পাঁচ দিনে। এরপর আবির্ভাব হলো ওয়ানডে ক্রিকেটের। সেটারও ৬০ ওভার, ৫০ ওভারের সংস্করণ দেখেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু সেখানেই শেষ হলো না বিবর্তন। এল ২০ ওভারের টি-টোয়েন্টি, ১০ ওভারের টি-টেন এবং ১০০ বলের ‘দ্য হানড্রেড’। এসবের মধ্যেও আবার আইনকানুন, নিয়ম কত যে আলাদা!
২০২১ সালে শুরু হওয়ার পর ইদানীং ইংল্যান্ডে কিছুটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ১০০ বলের ক্রিকেট দ্য হানড্রেডে একটা ম্যাচ শেষ হতে সময় লাগে সাধারণত আড়াই ঘণ্টার মতো। টি-টেনের আবির্ভাব আরও আগে, ২০১৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেটার সময় লাগে দুই ঘণ্টার মতো। তবে টি-টেন সংস্করণেরও এই অল্প সময়েই বিবর্তন হয়েছে অনেক। এই যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট কিটসে এখন চলছে দ্য সিক্সটি নামে টি-টেন সংস্করণের একটি টুর্নামেন্ট। বলা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত পেশাদার ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ করা ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের সংস্করণ এটি। দৈর্ঘ্যে এটি ১০ ওভারের ম্যাচের মতো হলেও সময়ের হিসাবে এটি শেষ হয় আরও দ্রুত।
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে দ্য সিক্সটি। পুরুষ, নারী দুই বিভাগের টুর্নামেন্ট চলছে সমান্তরালে। পুরুষ বিভাগে সিপিএলের ছয়টি দল এবং নারী বিভাগে তিনটি দল অংশ নিচ্ছে। ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া দ্য সিক্সটি শেষ হবে ২৮ আগস্ট। ইংল্যান্ডের দ্য হানড্রেড টুর্নামেন্ট দেখে যাঁরা মজা পাচ্ছেন, তাঁরা হয়তো আরও বেশি মজা পাবেন দ্য সিক্সটি দেখে। কথাটা উল্টো করেও বলা যায়। যারা দ্য হানড্রেডের ওপর বিরক্ত, তারা দ্য সিক্সটির ওপর আরও বেশি বিরক্ত হতে পারেন!
১০ ওভারের টি-টেন থেকে দ্য সিক্সটি বেশ কিছু জায়গায় আলাদা। কোথায়, সেটাও জেনে নিতে পারেন—
* দুই দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকলেও ব্যাটিং করা যাবে সর্বোচ্চ ষষ্ঠ উইকেট পর্যন্ত। মানে ষষ্ঠ উইকেট পড়লেই অলআউট।
* প্রতি ওভার শেষে প্রান্ত বদল হবে না, এক পাশ থেকে টানা ৫ ওভার বোলিং হবে, তারপর ওপাশ থেকে বাকি ৫ ওভার।
* ব্যাটিং দলের পাওয়ারপ্লে ২ ওভার। প্রথম ২ ওভারের মধ্যে দুটি ছয় হাঁকাতে পারলে ৩ থেকে ৯ ওভারের মধ্যে আরও ১ ওভার পাওয়ারপ্লে পাওয়া যাবে।
* ইনিংস শেষ করতে হবে ৪৫ মিনিটের মধ্যে। কোনো দল নির্ধারিত সময়ের মধ্য ওভার শেষ করতে না পারলে শেষ ওভারে একজন ফিল্ডার কম নিয়ে খেলতে হবে।
অদ্ভুত বা মজার একটি নিয়ম হচ্ছে রহস্যময় ফ্রি হিট। খেলা চলছে, বোলার বল করার জন্য দৌড় শুরু করেছেন—এমন সময় আম্পায়ার হাত উঁচিয়ে ইশারা দিতে পারবেন ফ্রি হিটের। এই ফ্রি হিটে বোলারের কোনো দায় নেই। এটি মূলত সমর্থকদের পছন্দের কারণে। দ্য সিক্সটির নির্দিষ্ট অ্যাপ চ্যাটে যেকোনো চারটি বল বাছাই করে দেওয়া হবে, সমর্থকেরা সেখানে ভোট দেবেন কোন বলটি ফ্রি হিট হবে। সবচেয়ে বেশি ভোট যে ওভারের যে বলটি পাবে, সেই বল ডেলিভারির আগমুহূর্তে আম্পায়ারের কাছে খবর যাবে ফ্রি হিট সংকেত দেওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে বোলারের যেহেতু দায় নেই, ফ্রি হিট বলের রান বোলারের খরচের খাতায় উঠবে না, যোগ হবে না ব্যাটসম্যানের নামের সঙ্গেও; স্কোরকার্ডে ‘মিস্ট্রি ফ্রি হিটের’ রান জমা হবে অতিরিক্ত হিসেবে!
আপনি পছন্দ করুন না–করুন, এত ‘সাসপেন্স’ ক্রিকেট যে আগে দেখেনি, এটা কিন্তু সত্যি।
কোন মন্তব্য নেই