যে কারণে বরিশাল বিভাগে লোডশেডিং কম

 


                                                     বিদ্যুৎ লা্ইন 
প্রতীকী ছবি



বরগুনা সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ আগে যেমন ছিল, এখনো সেভাবেই আছে। লোডশেডিং আগের মতোই। বেশি-কম হচ্ছে না।’

বাকেরগঞ্জের সদর রোডের বাসিন্দা বশির আহমেদ আজ সকালে বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ১১টা, আবার রাত ২টার পর ঘণ্টাখানেক বিদ্যুৎ ছিল না। আজ সকালে দুবার বিদ্যুৎ গেছে। বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর মহাব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চাহিদা ৪০ মেগাওয়াট। এর পুরোটাই আমরা পাচ্ছি। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে বেশি নয়।’

একই কথা জানান বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর মহাব্যবস্থাপক মৃদুল কান্তি চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমিতির চাহিদা ৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। চাহিদা অনুযায়ী পুরোটাই সরবরাহ থাকলেও আমরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি।’

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে গতকাল থেকে সারা দেশে এলাকাভিত্তিক বিদ্যুতের শিডিউল লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায় এর প্রভাব পড়েনি খুব একটা।

বিতরণ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বরিশাল ও ভোলায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সাতটি পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে। এসব প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভোলা, বরিশাল ও ঝালকাঠি—এই তিন জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে। এ ছাড়া পটুয়াখালী ও বরগুনা দুই জেলায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ করা হয়। এই দুই জেলার চাহিদা মিটিয়ে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। মূলত এ জন্যই বিভাগের এই পাঁচ জেলায় শিডিউল লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েনি। তবে বিভাগের পিরোজপুর জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় খুলনা থেকে। ফলে এ জেলায় শিডিউল লোডশেডিংয়ের আওতায় পড়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বরিশালে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। এর মধ্যে গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ২৭০ মেগাওয়াট, এগ্রিকো পাওয়ার কোম্পানি থেকে ৯৫ ও সামিট পাওয়ার থেকে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া ভোলায় ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট ও ৯৫ মেগাওয়াট এগ্রিকো রেন্টাল প্ল্যান্ট, রেন্টাল ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট প্ল্যান্ট, বোরহানউদ্দিনের ২২০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট—এ ৪টি প্ল্যান্ট থেকে দিনে ৫৭৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।

সূত্র জানায়, বরিশালে পল্লী বিদ্যুতের দুটি অঞ্চলসহ নগরীতে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২০০ মেগাওয়াট। এ চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হচ্ছে বরিশাল থেকে। তাই বরিশালে লোডশেডিং করা হচ্ছে না। ভোলায়ও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে ১০৫ মেগাওয়াট। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে পটুয়াখালী ও বরগুনাও লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত রয়েছে। আর ঝালকাঠিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় বরিশালের গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। ফলে এ জেলায় শিডিউল লোডশেডিংয়ের কোনো প্রভাব নেই।

দক্ষিণাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ টি এম তরিকুল ইসলাম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোডশেডিং করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সরবরাহ, বিতরণসহ বিভিন্ন কারণে বরিশালে বরাবরই লোডশেডিং কম হয়ে থাকে। আশা করছি, এবারও তাই হবে। এ জন্য শুধু পিরোজপুর ছাড়া বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায় আপাতত লোডশেডিং কম।’

ওজোপাডিকোর একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে বরিশাল অঞ্চলে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, এর উদ্বৃত্ত অংশ গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলায় নবনির্মিত ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে যুক্ত হয়ে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ আসবে। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হওয়ার সঞ্চালন লাইনটি এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় এই অঞ্চলে এ সুবিধা মিলছে। জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়ে গেলে এ সুবিধা সংকুচিত হতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.